শাহী কামরান :
চাকমারকুল ডিঙ্গাপাড়ার শীর্ষ ইয়াবা ডন সাইদুল (প্রকাশ: সাইদ্দা) রামু উপজেলার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত । সে চাকমারকুল ইউনিয়নের মরহুম মোস্তফার প্রথম পুত্র।
জনমনে প্রশ্ন, তার হঠাৎ পরিবর্তন যেন আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মত। অবৈধ পথে ইনকাম করে সে এখন কোটিপতি। খরুলিয়ার ক্রসফায়ার হওয়া ও আটককৃত ইয়াবা ব্যবসায়িরা সাইদ্দার পার্টনার। তার চলাফেরা অসামাজিক পর্যায়ে চলে গেছে অথচ প্রশাসন নিশ্চুপ
গোপনসূত্রে জানা যায়, সে ডন স্টাইলে চলাফেরা করে। নিজে ইয়াবার টাকায় তৈরি করেছেন বড় রাজ প্রাসাদ। ব্যবহার করেন ৩ লাখ টাকা দামের ২টি মোটর সাইকেল। স্থানীয় বড় বড় নেতা ও জন প্রতিনিধি ভয় পান তাকে। সবসময় পকেটে রাখেন অস্ত্র তাই ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেনা।
উল্লেখ্য যে, মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে খরুলিয়ার কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলেও আইনের আওতায় আসেনি অনেক ইয়াবা কারবারি। ধরা ছুঁয়ার বাইরে থেকে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা সম্রাটদের একের পর এক আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ক্রসফায়ার দিচ্ছে, তখন কক্সবাজার রামু উপজেলার শীর্ষ ইয়াবা সম্রাট সাইদুল বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা কার্যক্রম।
সে কতিপয় অসৎ পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কারবার। এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়ার ডেইঙ্গা পাড়া এলাকার সাইদ্দা একজন ইয়াবা ডন হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি বরাবরই অধরা রয়ে গেছেন। তালিকার শীর্ষে থাকা অনেক ইয়াবা ডন গ্রেপ্তারের পরও নিজের অবস্থান টিকিয়ে সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যার ফলে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকাশ্যে পাচার করছে কাড়িকাড়ি ইয়াবা।
সূত্রে জানায়, বৃহত্তর খরুলিয়ার ইয়াবার বাজার নিয়ন্ত্রন সাইদুলের হাতে থাকায় অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইদুলের কাছ থেকে পাইকারি ও খুচরা ইয়াবা ক্রয় করে। খরুলিয়ায় এ ধরনের প্রায় অর্ধশতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের মতে ডেইঙ্গা পাড়ার মৃত মোস্তফার ছেলে সাইদুল প্রকাশ মাদক সম্রাট সাইদুল অন্যতম। এছাড়া কয়েকজনের নাম সদর থানায় তালিকাভুক্ত আছে। খরুলিয়ায় গত এক বছরে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও জানান এলাকাবাসী।
যার ফলে বর্তমানে খরুলিয়ার অলিতে গলিতে ও পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালে পাওয়া যায় মরণব্যধী ইয়াবা আর ইয়াবা। মাঝে মধ্যে সদর থানা পুলিশ খুচরা ব্যবসায়ীদের ধরে আইনগত ব্যবস্থা নিলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা রয়েছেন অধরা। পুলিশ কিছু কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় আনলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম যেন দীরগতির।
খরুলিয়ার ইয়াবা ডন সাইদুল ইয়াবা ব্যবসা করে গত কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নামে-বেনামে খরুলিয়া এলাকায় জায়গা-জমি কিনে সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তিনি একটি দোকানের কর্মচারি ছিলেন। এরপর একাধিক মামলা খেয়ে দেউলিয়া হয়েছিলেন। কিন্তু মরণনেশা ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে আজ কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে মতে, সাইদুল সম্প্রতি খরুলিয়ায় নির্মাণ করেছেন কোটি টাকা ব্যায়ে বিলাশবহুল বাড়ি। এছাড়া শহরের কলাতলী আবাসিক এলাকার বিভিন্ন হোটেলে তার ফ্ল্যাটের ব্যবসা আছে।
সূত্রমতে, ইয়াবা সম্রাট সাইদুলের নেতৃত্বে পুরো ঝিলংজার বিভিন্ন সিন্ডিকেট মোটা দাগের ইয়াবা লেনদেন ও পাচার কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এ কাজে পারদর্শী বিত্তহীন থেকে কোটিপতি হওয়া উক্ত রানা নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে কালো টাকাকে সাদা করতে ব্যস্ত।
সচেতন অভিভাবকদের অভিমত, বর্তমান ভয়াবহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যেসব কিশোর, যুবক জড়িয়ে পড়েছে, তাদের একটি অংশ মাদকাসক্ত ও মাদক পাচারের সাথে কোনও না কোনওভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মতে, কারা ইয়াবা পাচার করে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে, তাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন সহ সমাজের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বা নজরদারির দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, আগামী প্রজন্ম খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।
এলাকাবাসী আরো জানায়, খরুলিয়ার অপরাধজগত ও নানা অপকর্মের অন্যতম ইয়াবা ব্যবসায়ী সাইদুলকে গ্রেপ্তারে বেরিয়ে আসবে ইয়াবা পাচারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ডেইঙ্গা পাড়া এলাকার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, সাইদুল প্রকৃত ইয়াবা গডফাদার তা এলাকার মানুষ অবগত রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের করা মাদক কারবারিদের তালিকায় সাইদুল শীর্ষে রয়েছে।
এবিষয়ে সাইদুলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সদর থানার ওসি (দতন্ত) খাইরুজ্জামান বলেন, মাদক কারবারিদের কোন ছাড় নাই। পালিয়ে কেউ বেশিদিন বাঁচতে পারে না। পুলিশ ঠিকে খোঁজে বের করে আইনের মুখামুখি করবে। তালিকা থেকে বাদ পড়া মানে বেঁচে যাওয়া নয়। মাদক কারবারিরা যতো বড় মাপের হোক তাদের বিরুদ্ধো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-